আপনার বাড়িটি যদি হয় একতলা, আর তার ভিত্তিপ্রস্তর যদি দোতলা বা আরো অধিক উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য করা হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির উর্ধ্বমুখী গমনই শ্রেয়। এতে আপনার সীমিত জমির সদ্ব্যবহার হবে, পাশাপাশি বাসা ভাড়া থেকে একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও হবে।
তবে একতলা বাড়ির ওপর আরেকটি ছাদ দিয়ে ফেলা অতটা সহজ নয়, অন্তত ঠান্ডা মাথায় ভাবলে তো নয়ই। দীর্ঘস্থায়িত্ব, খরচ আর নির্মাণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে একতলা বাড়ির ওপর দ্বিতীয় ফ্লোরের প্রসারণ কাজের জন্য অবশ্যই কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে।
আবহাওয়া
বাড়ির প্রসারণ পরিকল্পনায় সবার আগে ভাবতে হবে আবহাওয়া নিয়ে। নির্মাণকাজের জন্য সর্বদাই শুষ্ক মৌসুম মানানসই। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনা করলে হেমন্তের শেষ থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে ভালো সময়। হঠাৎ ঝড়ো আবহাওয়া সব কাজে তালগোল পাকানো কিংবা টানা বর্ষণে কাজ থমকে থাকার ঝামেলা এ সময়ে হয় না।
বাজারদর ও কাঁচামাল ক্রয়
আবহাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রেখে যদি দোতলা নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, তাহলে পরবর্তী ধাপ হবে বাজার যাচাই করা। ছোটখাট বিষয়গুলো যদি ধর্তব্যের মাঝে না-ও আনা হয়, তথাপি বাড়ি নির্মাণের প্রধানতম কাঁচামালগুলো, অর্থাৎ ইট, বালু, সিমেন্ট আর রডের বাজার অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে।
এসব বাজার সম্পর্কে যেহেতু নিত্যদিন খবর রাখা হয় না, তাই ভুলভাল দামে ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, যদি না আপনি অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন। এছাড়া, নির্মাণে ব্যবহৃত কাঁচামালের বাজার দ্রুত ওঠানামা করে। মাসখানেকের ব্যবধানে আপনার বাড়ি নির্মাণের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন, বাজার অস্থিতিশীল থাকলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়ে গেলেই ক্রয় শুরু করতে পারেন, তবে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রতিটি কাঁচামাল আলাদা আলাদা দিনে একাধিক বিক্রেতার কাছে দেখার পর কিনতে হবে। ভালো কাঁচামাল বাড়ির নির্মাণকে ত্রুটিমুক্ত করে, বাড়ি টেকসই হয়।
বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা প্রণয়ন
একসময় নীচতলার ডিজাইন ধরে রেখেই উপরের দিকে বাড়ানো হতো বাড়ি। তবে এখন আর মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। নীচতলার নকশা হুবহু অনুকরণ না করে ভিন্নতা আনতে পারেন দ্বিতীয় তলায়, বিশেষ করে নীচতলায় বসবাসকালীন যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলোর সমাধান তো আনা যায়ই।
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। নকশা কতটা সৌখিন আর নান্দনিক হবে তা নির্ভর করবে পুরো কাজে আপনি কতটুকু ব্যয় করতে প্রস্তুত তার ওপর। দক্ষ কোনো স্থপতির সাথে পরামর্শ করে তাই নকশা প্রণয়ন করে ফেলুন; পরিচিত হলে আরো ভালো, এতে বাজেটের মাঝে সর্বোচ্চটা পাবার নিশ্চয়তা থাকে।
‘অপ্রত্যাশিত’ খরচের বাজেট আলাদা রাখুন
হ্যাঁ, বাড়ি নির্মাণকালে সর্বনিম্ন বাজেটে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি করবার লক্ষ্য যেমন থাকবে, তেমনি মনে রাখতে হবে যে বাড়ির এক্সটেনশন একটি বৃহৎ পরিসরের কাজ, এবং এ কাজে পরিকল্পনার বাইরেও অনেক খরচ হবে। তাই মূল বাজেটের একটা অংশ সরিয়ে রাখুন অপ্রত্যাশিত যেকোনো খরচের জন্য, যা পরিকল্পনা তৈরির সময় দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই টাকা বাদে বাড়ির মূল কাঠামোর বাজেট করতে হবে।
নির্মাণ-আইন মাথায় রাখুন
নির্মাণকাজে সম্ভবত আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলিত দিকটি হলো নির্মাণ-আইন। নির্মাণ-আইন মেনে চলা আদর্শ নাগরিকের দায়িত্ব। পাশাপাশি আইন মেনে নির্মাণকাজ করলে কোনোপ্রকার আইনি জটিলতার সম্ভাবনাও থাকে না।
নিরাপত্তা সবার আগে
নির্মাণকাজ শুরুর আগেই নিরাপত্তার দিকটা দেখতে হবে। প্রথমত, যেহেতু আপনার বসবাসরত বাসার উপরেই প্রসারণ কাজ হবে, এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা। তাছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কখনো কখনো প্রাণহানিও হয়। একদিকে প্রাণহানি কাম্য নয়, অন্যদিকে আইনি জটিলতায় পড়ে আটকে যেতে পারে পুরো নির্মাণকাজ। তাই প্রচলিত নিরাপত্তা আইন মেনে সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেই নির্মাণকাজ শুরু করুন।
বিশ্বস্ত বিল্ডার (নির্মাতা)
বেশ কিছু কারণে বিল্ডার নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই বাজেটের সাথে সঙ্গতি রেখে সুনাম আছে এরকম বিল্ডার কিংবা আপনার বা আপনার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরিচিত বিল্ডারের কাছেই যান। এক্ষেত্রে কাঁচামাল ক্রয়ে সঠিক পরামর্শ বিল্ডারদের নিকটই পাবেন, বাড়ির নকশায় কোনো ত্রুটি থাকলে, কিংবা উন্নতির সুযোগ থাকলে সেই বিষয়টিও তারা আপনার দৃষ্টিগোচর করতে পারবে। আদৌ যদি পরিচিত বিল্ডার না থাকে, তাহলে একাধিক বিল্ডারের সাথে কথা বলুন, আপনার বাজেট এবং পরিকল্পনা জানিয়ে তাদের নির্মাণপ্রক্রিয়া, কাল (নির্মাণকাজের একটি টাইমলাইন) এবং বাজেট জানাতে বলুন। এরপর তাদের পরিকল্পনা তুলনা করে নিজেই ধারণা করতে পারবেন কোনটি ভালো হবে।
একটি ইনস্যুরেন্স করে ফেলুন
সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর একটি ইনস্যুরেন্স করিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিন। নির্মাণকাজ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পূর্বের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ এবং সহজ হয়েছে। তথাপি সাবধানতার মার নেই। যেকোনো নির্মাণকাজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নির্মাণ শুরুর পূর্বেই করে ফেলুন একটি ইনস্যুরেন্স,