Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

ছাদের ওপর পানির ট্যাংক: বাড়ির স্ট্রাকচারের কথা আমলে এনেছেন তো?

ঘর শব্দটার সাথে শান্তি এবং আরাম এ দুটো বিষয় নিবিড়ভাবে জড়িত। আবার দালানের সৌন্দর্য্যের দুটো দিক আছে, একটি বাহ্যিক অপরটি ভেতরের বা অন্দরসজ্জা। সময়ের সাথে সাথে মানুষের মাঝে অন্দরসজ্জা বা ইন্টেরিয়র নিয়ে আগ্রহ যেমন বেড়েছে সেই সাথে বেড়েছে পেশাদার ডিজাইনারদের দিয়ে অন্দরসজ্জা করার প্রবণতা। আর সেই অন্দরসজ্জায় কাঠের মেঝে নতুন এক মাত্রা যোগ করে।

কেন ব্যবহার করবেন?

আগেকার সময়ে ঘরে সৌন্দর্য্য ও আভিজাত্য আনতে কাঠের মেঝের ব্যবহার দেখা যেতো। এখনো বেশকিছু অঞ্চলে কাঠের মেঝে ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায় এর মাঝে উল্লেখযোগ্য মুন্সিগঞ্জ, এছাড়া জাপান, থাইল্যান্ড ও ভুটানে এখনো কাঠের ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়। আমাদের দেশে এখনকার সময়ে ঘরের সাজে আভিজাত্য ও ব্যতিক্রমী ভাব ফুটিয়ে তুলতে শহরের বাড়িঘরে এমনকি অনেক অফিসেও দেখা মেলে কাঠের মেঝের।

কোথায় ব্যবহার করবেন?

বাসা বাড়িতে কাঠের মেঝে ব্যবহারের উপযুক্ত ঘর হচ্ছে বসার ঘর। এছাড়া শোবার ঘর বা ফ্যামিলি লিভিং রুমেও কাঠের মেঝে ব্যবহার করা যায়, তবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের মতে, খাবার ঘরে কাঠের মেঝে ব্যবহার না করাই ভালো কেননা খাবার ঘর বা ডাইনিং রুমে পানির ব্যবহার বেশি হয়, যা কাঠের মেঝের জন্য বেশ ক্ষতিকর। পানির সংস্পর্শে থাকা কাঠ সহজে নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

কীভাবে অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করবেন?

যে রুমে কাঠের মেঝে ব্যবহার করা হয় সে রুমের আসবাবপত্র নির্বাচনে লক্ষ্য রাখতে হবে। কাঠের মেঝে ব্যবহারে রুম বেশ বড় দেখায় সেক্ষেত্রে ঐ রুমে অনেক বেশি নকশা করা জাঁকজমকপূর্ণ ফার্নিচারের থেকে খুব সাদামাটা ফার্নিচার বেশি উপযুক্ত। উডেন ফ্লোরের সঙ্গে যেকোনো কাঠ, বেত, রড, আয়রনসহ সব ফার্নিচার মানিয়ে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে মেঝের রঙের সঙ্গে ফার্নিচারের রং যেন মিলে না যায় বরং মেঝে এবং ফার্নিচারের রং যেন আলাদা হয়। এতে নান্দনিক অন্দরসজ্জার সাথে সাথে ঘরের সাজেও আলাদা মাত্রা যুক্ত হবে।

কাঠের মেঝে আর কাঠের টাইলসের সমন্বয় বসার ঘরে ভালো মানায়। এ জন্য কাঠ রঙের হালকা ও গাঢ় দুটি শেড বেছে নেওয়া যায়। মেঝের যে অংশটি হাইলাইট করা হবে সেখানে ব্যবহার করা যায় উডেন ফ্লোর। এর সঙ্গে কাঠের ফলস সিলিংয়ের ব্যবহারে ঘরে আভিজাত্য নিয়ে আসা সম্ভব।

প্রকারভেদ

কাঠের মেঝে সাধারণত দুই ধরনের- প্রক্রিয়াজাত কাঠ এবং কাঠের টেক্সচারের টাইলস। এর মধ্যে প্রক্রিয়াজাত কাঠের মেঝে ব্যয়সাপেক্ষ হলেও দেখতে বেশি সুন্দর। আবার দুটির সমন্বয়ও মন্দ হয় না। খরচ কম হওয়ায় উডেন টাইলস ব্যবহার করা হয় সর্বত্র। বাংলাদেশে কেরোসিন, সেগুন ও মেহগনি গাছের কাঠ দিয়েও কাঠের মেঝে তৈরি করা যায়। তবে সেগুন ও মেহগনি কাঠ দিয়ে কাঠের মেঝে তৈরি করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।

২০ ও ১৪ মিলিমিটার পুরু দুই ধরনের কাঠের মেঝে বাজারে বিক্রি হয়, ব্যতিক্রম ভেদে যার দাম পড়বে প্রতি স্কয়ার ফুট ১৪০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড সাইজ ১৫-১২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি রুমের মেঝে কাঠ দিয়ে দিতে খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

কাঠের মেঝের যত্ন

কাঠের ঝকঝকে ভাব ধরে রাখতে একটু যত্নশীল হতে হয়। অনেকেই কাঠের এ মেঝে পরিষ্কার করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। সহজ কিছু উপায়ে মেঝে পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে রাখা যায়।

মেঝে উজ্জ্বল ও ঝকঝকে রাখার জন্য নিয়মিত ঝাড়ু দেয়া, ভ্যাকুয়াম বা মোছা উচিৎ। কতদিন পর পর বা দিনে কতবার মেঝে পরিষ্কার করতে হবে, সেটা নির্ভর করে মেঝের ব্যবহারের ওপর। এজন্য আপনার উড ফ্লোর ক্লিনার, পানি, কাপড়, ঝাড়ু, ডাস্ট মোপ বা ভ্যাকুয়ামের প্রয়োজন হবে। ধুলা ও পাথরকণা কাঠের মেঝেতে দাগ সৃষ্টি করতে পারে, তাই প্রতিদিন অন্তত একবার ঝাড়ু বা ভ্যাকুয়াম করে পরিষ্কার করা উচিৎ। কার্পেট, বিছানা ও পাপোশের নিচে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, এছাড়া চলাফেরার সময় পায়ের নিচে ধুলা-ময়লা মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া হালকা ধুলা ময়লা পরিষ্কার করতে আপনি নরম ঝাড়ু ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো সাধারণত নাইলন বা রাবার দিয়ে তৈরি করা হয়। উভয় প্রকারের ঝাড়ুই ধুলা বা পাথরের কণা পরিষ্কারে সহায়তা করে থাকে। জমে থাকা মাটি পরিষ্কারে ডাস্টপ্যান বা হ্যান্ড ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করতে পারেন। তবে দুটি মাইক্রোফাইবার মপ থাকা ভালো। একটি শুকনো ধুলা-ময়লা পরিষ্কার এবং অন্যটি ভেজা স্থান পরিষ্কারের জন্য।

এছাড়া শক্ত কাঠের মেঝে পরিষ্কারের জন্য ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করা যায়। মেঝেতে দাগ হওয়া প্রতিরোধের জন্য নরম ব্রিসলযুক্ত এবং প্রত্যাহারযোগ্য বিটার বার রয়েছে এমন একটি ভ্যাকুয়াম নির্বাচন করতে হবে। আসবাব বা ঘরের কোণের ধুলা-ময়লা পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা যায়। মেঝে পরিষ্কারে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পানি জমা হয়ে থাকে, এমন মপ বা কাপড় ব্যবহার না করার ভালো। বিশেষ করে গাঢ় রঙের ভেজা কাপড়, তরল খাবার বা পানীয়ের বিষয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা অবলম্বন করা উচিৎ। এমন কিছু পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে কারণ এগুলো কাঠের জন্য ক্ষতিকর। তরল ক্লিনার দিয়ে মেঝে পরিষ্কারের পর আবার শুকনো কিছু দিয়ে পুনরায় একবার মুছে দেয়া ভালো।

কাঠের মেঝে যুগ যুগ ধরে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের দেশের এই ঐতিহ্য আধুনিকতার সাথে মিলিয়ে ফিরে আসছে আবার শহরের অন্দরসজ্জায়। এতে নান্দনিকতার সাথে সাথে ঘরের আভিজাত্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।