নির্মাণাধীন ভবন বা যে ভবনে আমরা বসবাস করছি সেখানে কোন জায়গায় অযথা পানি জমতে দেওয়া যাবে না। শুষ্ক মৌসুমে এ সমস্যা প্রকট না হলেও বর্ষা মৌসুমে তা প্রকট আকার ধারণ করে। এবার আসুন নির্মাণাধীন বাসা বাড়িতে কিভাবে বদ্ধ পানির সৃষ্টি হতে পারে এবং আমাদের করণীয় কি কি তা জেনে নেওয়া যাক। আমাদের করণীয় সময়কালকে দুইভাগে ভাগ করা যাক। একটি হচ্ছে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে এবং নির্মাণ শেষ হওয়ার পর।
ভবন নির্মাণ চলাকালীন সময়ে করণীয়ঃ
চিত্রঃ খালি প্লট
যেসব প্লটে এখনো বাড়ি নির্মাণ করা হয়নি সেসব জায়গা নিয়ে আমরা তেমন সতর্ক থাকি না। এসব প্লটে স্বাভাবিকভাবেই অনেক জায়গায় উঁচুনিচু থাকে। ফলে বৃষ্টি হলেই অনেকদিন পানি জমে থাকে। টানা বৃষ্টিতে এসব জায়গায় হতে পারে মশার বংশবিস্তারের উৎপত্তিস্থল। আবার আমরা পাশের খালি প্লটেই ময়লা আবর্জনা ফেলি। এমনকি ব্যবহার্য পানির লাইনের আউটলেটও পাশের খালি প্লটে দিয়ে রাখি। ফলে বদ্ধ পানি জমে থাকে যা মশার বংশবিস্তারে সাহায্য করে।
মাটি কাটার কাজের সময়
নির্মাণাধীন প্রকল্প চলার সময় মাটি কেটে যেন আমরা এমনভাবে না রাখি যাতে ছোট্ট জলাশয়ের মত তৈরি হয়। অনেক্সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলে এসব জায়গা মশার বংশবিস্তারের কারণ হতে পারে।
চিত্রঃ পাইল কন্সট্রাকশন
কাস্ট ইন সিটু বা যে পাইল সাইটেই কনস্ট্রাকশন করা হয় সেই কাজ চলার সময় ওয়াশ ও ময়লার ফেলার জন্যে ছোট ছোট রিজারভারের মত বানানো হয়। কিন্তু কাজ শেষে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তবে ময়লা জমে বদ্ধ পানি মশার বংশবিস্তারের কারণ হতে পারে।
আন্ডার গ্রাউন্ড রিজারভার তৈরি হওয়ার পর
আন্ডার গ্রাউন্ড রিজারভার তৈরি হওয়ার পর মুখ খোলা অবস্থায় অনেকদিন পানি জমে থাকলে সেটিও হতে পারে মশার বংশবিস্তারের কারণ। তাই ভবনের কাজ শেষ না হলেও এটি নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
পাশের বাড়ির বাউন্ডারি ওয়ালের সাথে জায়গা
ফাউন্ডেশন এবং গ্রেড বিম শেষ করে বেশিরভাগ সমদয় পুরো প্লটে আমরা মাটি ভরাট করিনা। এক্সিটিং গ্রাউন্ড লেভেল এবং ফিনিশড গ্রাউন্ড লেভেলের উচ্চতার পার্থক্য থাকায় এবং ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকার কারণে পাশের বাড়ির বাউন্ডারী ওয়ালের সাথে পানি জমে থাকতে পারে। এটিও জমতে দেওয়া যাবে না।
কিউরিং এর সময়
আমরা সবাই জানি নির্মাণ প্রকল্পে কিউরিং একটি অত্যাবশকীয় কাজ। কিন্তু এর ফলে যেন কোথাও পানি না জমে থাকে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে ছাদের কিউরিং এর পর খেয়াল রাখতে হবে। ছাদ ঢালাইয়ের এর পরদিন আমরা ছাদের চারপাশে বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি মশলা দিয়ে বাঁধ দেয়। বাঁধের মাঝে পানি জমিয়ে রেখে কিউরিং করি। কিউরিংয়ের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা জমানো পানি বের করে দেয় কিন্তু মশলার বাঁধ সব জায়গায় ভাঙ্গি না এবং স্লাবের স্লোপও ঠিক থাকে না। ফলে এসব জায়গায় টানা বৃষ্টিতে সহজেই পানি জমে থাকে যা মশার বংশবিস্তারের কারণ হতে পারে।
বেজমেন্ট
যেসব বিল্ডিংয়ে বেজমেন্ট থাকে সেগুলোতে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ময়লা ও পানি জমে আছে যা মশার বংশবিস্তারের অন্যতম প্রধান জায়গা হতে পারে।
চিত্রঃ সাটারিং ম্যাটেরিয়াল
নির্মাণাধীন সাইটে আমরা সাটারিং ম্যাটেরিয়াল ছাদের উপর জমা করে রাখি। যেখানে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ মশার বংশবিস্তারের কারণ হতে পারে। সাটারিং যদি কাঠের হয় তবে তা পচেও মশার বংশবিস্তারের কারণ হতে পারে।
লেবারদের থাকার জায়গা
সাইটে কাজ চলার সময় লেবাররা সাইটে থাকে। ফলে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলোও সাইটেই করতে হয়। কাজ শেষে ময়লা আবর্জনা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিকমত না করলে এটি মশা উৎপাদনের কারণ হতে পারে।
ফ্লোর পরিষ্কার না থাকলে
সব ছাদ শেষ হওয়ার পরও টাইলস বসানোর আগ পর্যন্ত নিয়মিত ঝাড়ু দিতে হবে যেন কোন মতেই ময়লা আবর্জনা ও পানি না জমতে পারে। যেহেতু এসময় স্লাবের স্লোপ এবড়ো থেবড়ো থাকায় এবং ব্রিক ওয়ালের কাজ না হলে সহজেই বৃষ্টির পানি ফ্লোরে জমতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে এধরণের পানি যেন অবশ্যই বেশিদিন না জমে থাকে।
শেষ স্লাব ঢালাই এর পর
শেষ স্লাব ঢালাই শেষ হওয়ার পর স্লাবের ফিনিশিং কাজ বা পানি যাওয়ার লাইন না হওয়া পর্যন্ত পানি যেন না জমে সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। পরিষ্কার না রাখলে শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল জায়গা মশা বংশবিস্তারের কারণ হতে পারে।
ওভার হেড ওয়াটার ট্যাংক
রিজারভার ট্যাংকের মত ওভার হেড ওয়াটার ট্যাংকও মুখ খোলা অবস্থায় পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। নাহলে এখানেও মশা বংশবিস্তার করতে পারে।
চিত্রঃ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ট্যাংক
অনেক সময় কনস্ট্রাকশন সাইটে অস্থায়ীভাবে প্লাস্টিক ওয়াটার ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। এটি মুখ খোলা অবস্থায় পরিত্যক্তভাবে ফেলে রাখলে এখানে পানি জমে মশার ডিম পাড়ার জায়গায় পরিণত হবে।
এছাড়া সিমেন্টের ব্যাগ যত্র তত্র পড়ে থাকলে, কেমিক্যালের কৌটা, প্লাস্টিক ড্রাম ইত্যাদিতে পানি জমেও মশা বংশবিস্তার করতে পারে। এমনকি মিক্সার মেশিনের যে জায়গায় কংক্রিট তৈরি করা হয় সেখানে সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যখন কাজ বন্ধ থাকে তখন ও পানি সেখানে না জমে থাকে। সর্বোপরি সাইটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় মশার বংশবিস্তার রোধ করতে পারে।