একটি দালান নির্মাণের সময় একে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে কাঠামোগত উপাদান এবং আরেকটি হচ্ছে কাঠামোগত উপাদান নয় এমন। এর মধ্যে কাঠামোগত উপাদানগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ফাউন্ডেশন, কলাম, বিম, স্ল্যাব ইত্যাদি। এখানে আমরা মাটির নিচে অর্থাৎ ফাউন্ডেশনের নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করবো।
ফাউন্ডেশন কাজ করার আগে গ্রিড লে-আউট দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যে প্রথমে ড্রয়িংয়ে ফাউন্ডেশন লে-আউট, কলাম লে-আউট খুব ভালো করে দেখে নিতে হবে। লে-আউট দেওয়ার আগে সাইট সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এরপর সুবিধামত জায়গায় অথবা পরিধির যেদিকে লাইন সবচেয়ে বেশি সোজা, সেদিক থেকে লে-আউট দেয়া শুরু করতে হবে। এখানে কর্নারগুলো পিথাগোরাসের সূত্র অনুসারে ৯০০ তে আছে কিনা দেখে নিতে হবে। একাধিকবার এই লে-আউট চেক করা বা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে চেক করানো ভালো। কারণ এতে ভুল থাকলে পুরো বিল্ডিংটি ভুলভাবে নির্মিত হবে। লে-আউট ফাইনাল করে স্থায়ীভাবে গ্রিডগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বেশিরভাগ সময় প্রত্যেকটি স্থানে লাল রঙ দিয়ে লিখে চিহ্নিত করা হয় যাতে সব ফাউন্ডেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুঝা যায় গ্রিড লাইন কোনদিকে কোথায় চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর গ্রিড লাইন ধরে ড্রয়িং মোতাবেক প্রতিটি কলামের সেন্টার লাইন ঠিক করে ফুটিং এর পয়েন্ট বসাতে হবে। ড্রয়িংয়ে ফুটিং এর সেন্টার এবং কলামের সেন্টার কোথায় আছে সে অনুসারে চেক করে নিতে হবে।
আবার ফাউন্ডেশন দুই ধরণের। একটি হলো শ্যালো ফাউন্ডেশন, অন্যটি হলো ডিপ ফাউন্ডেশন। শ্যালো ফাউন্ডেশন না হয়ে যদি ডিপ ফাউন্ডেশন হয়, তবে কলাম লে-আউট চূড়ান্ত হওয়ার পর পাইল লে-আউটও দিতে হবে। গ্রিড লাইন রেফারেন্সে কলামের সেন্টার লাইন ঠিক করতে হবে এবং তার উপর ভিত্তি করে পাইল পয়েন্টগুলো দিতে হবে। পাইল পয়েন্টে ছোট রড বসিয়ে সামান্য ঢালাই করে দেওয়া ভালো, এতে পরে পয়েন্টগুলো হারিয়ে যাবে না। পাইল কনস্ট্রাকশনের সময় কাদার মধ্যে পাইল পয়েন্ট খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
এরপর, পাইল কনস্ট্রাকশনের জন্য তেপায়ার সাহায্যে চিসেল পাইল পয়েন্টের উপর বসাতে হবে। চিসেলের মধ্যে পানি দিয়ে পূর্বে ঢালাইকৃত পাইল পয়েন্টের কাটপিস রডের ঠিক উপরে যদি পানি পড়ে, তাহলে বোঝা যাবে যে সঠিক জায়গায় চিসেলটি দাঁড় করানো হয়েছে। উইন্স মেশিনের সাহায্যে ৫/৬ ফিট বোরিং করে কেসিং পাইপ বসাতে হবে যার ব্যাস পাইলের ব্যাসের সমান হবে। ড্রয়িংয়ে যতদূর পর্যন্ত পাইলের লেন্থ দেখানো আছে, সেই লেন্থের চেয়ে ১ ফুট বেশি বোরিং করা ভালো যাতে নিচের কাদাটা ঐ ১ ফুটের মধ্যে জমা হয় বা অনেক সময় নিচে মাটি ভেঙে গেলেও পাইলের লেন্থ নিয়ে যেন কোন সমস্যা না হয়। বোরিং শেষ করে কমপক্ষে আধাঘন্টা ওয়াশ করতে হবে যতক্ষণ কাদাপানির বদলে পরিষ্কার পানি বের না হয়। ওয়াশ শেষে রডের খাঁচা বোরিং এর ভিতর নামাতে হবে। ট্রিম পাইপের সাহায্যে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ট্রিম পাইপ ঢালাই এর সময় পাইপের মাথা ঢালাইয়ের এর ৬ ইঞ্চি নিচে থাকে। মিক্সার মেশিনের সাহায্যে নির্দিষ্ট অনুপাতে কংক্রিট ট্রিম পাইপের মাথায় ফানেলের উপর দিতে হবে। কাট অফ লেভেল অংশটুকু ফলস্ ঢালাই করতে হবে। মনে রাখতে হবে কেসিং পাইপের উপরে কংক্রিট ভেসে উঠলে ঢালাই বন্ধ করতে হবে। সাধারণত পাইল থেকে পাইলের, সেন্টার থেকে সেন্টার দূরত্ব পাইলের ব্যাসের তিনগুণ হয়ে থাকে। কনস্ট্রাকশনের সময় পাশাপাশি পাইল পর পর করা যাবে না।
সমস্যা ও সমাধান
১। অনেক সময় পাইলের পয়েন্ট সরে যায়। ২” বা ৩” সরে গেলে পাইল ক্যাপ বড় করে ঢালাই দিয়ে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু ৬” বা ১’ সরে গেলে রি-ডিজাইন করে পাইল ক্যাপ ঢালাই করতে হবে।
২। পাইলের মধ্যে ফাঁকা থাকলে ভেঙে পুনরায় ঢালাই করতে হবে।
৩। মাটি চারদিক থেকে ভেঙে যাওয়াকে ক্যাভিন বলে। রোধ করার জন্যে কেমিক্যাল (যেমনঃ ভেন্টুনাইট বা গোবর) ব্যবহার করা যেতে পারে। বেশী মাত্রায় ভেঙে গেলে বোরিং বন্ধ রেখে কিছুদিন পর কাজটি করতে হবে।
পাইল শেষ হলে পাইল ক্যাপের জন্যে অথবা শ্যালো ফাউন্ডেশন হলে ফুটিং এর জন্যে মাটি কাটতে হবে। তাই মাটি কাটার পূর্বে কী ধরনের ফাউন্ডেশন এর জন্য মাটি কাটতে হবে তা খেয়াল রাখতে হবে। মাটির কন্ডিশন বুঝে কিভাবে মাটি কাটতে হবে বা কী দ্বারা মাটি কাটা হবে তাও লক্ষ্য করতে হবে।
সাধারণত যেসব ফুটিং হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক) আইসোলেটেড কলাম ফুটিং খ) কম্বাইন্ড ফুটিং গ) ম্যাট ফুটিং
মাটির অবস্থা ভাল হলে ফাউন্ডেশন সাধারণত আইসোলেটেড কলাম ফুটিং বা কম্বাইন্ড ফুটিং হয়। এই ফাউন্ডেশনের গভীরতা ৮ ফুট থেকে ১০ ফুট হয়ে থাকে। মাটির অবস্থা ভাল হলে এবং শীতের সময় কাজ হলে মাটি কাটার সময় তেমন কোন সমস্যা হয় না কিন্তু মাটির অবস্থা খারাপ হলে এবং বর্ষার সময় কাজ হলে বিভিন্ন জিনিসের মাধ্যমে সেফটি মেজার্স নিতে হবে। যেমনঃ বাঁশের চাটাই, বল্লি গাড়া ইত্যাদি। ড্রয়িং অনুসারে স্লোপ আকারে মাটি কাটতে হবে এবং কাটা মাটি কোন অবস্থাতেই বাউন্ডারি ওয়ালের উপর বা সাইটের ভিতর পাহাড়ের মত উঁচু করে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে মাটি বের করার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে মাটির অবস্থা খুব খারাপ হলে বা বিল্ডিংয়ে বেজমেন্ট থাকলে ম্যাট ফুটিং দেওয়া হয়ে থাকে। একটি বেজমেন্ট থাকলে ফুটিং এর গভীরতা ১৫ ফুট এবং একাধিক বেজমেন্ট থাকলে গভীরতা আরো বাড়তে থাকে। আশেপাশের স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য এরিয়ার প্রোপার্টি লাইনের চারপাশে শোর পাইল বা জয়েস্ট ড্রাইভ করতে হবে যাতে মেশিন দিয়ে মাটি কাটার পর চারপাশের মাটি ভেঙে না আসে। কয়েক লেভেলে মাটি কেটে পাইল বা জয়েস্টের মাথার উপর কপিং বা ব্রেসিং দিতে হবে।
মাটি কাটার সময় নিচ থেকে পানি উঠলে পাম্প দিয়ে তা অন্যত্র ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কোথাও ইউটিলিটি লাইন থাকতে পারে, সেটার জন্যেও সেফটি মেজার্স নিতে হবে।
এরপর ড্রয়িং অনুযায়ী সাটারিং করতে হবে। চতুর্ভূজের কর্ণ চেক ফুটিং-এর ডায়াগোনাল চেক করা যেতে পারে। ফুটিং-এর থিকনেস অনুযায়ী কাঠের উচ্চতা ঠিক করতে হবে। সাটারিং-এর কাঠে কোন ডিফেক্ট থাকলে তা বাতিল করতে হবে। কাঠের জয়েন্টে পাতলা স্টিলের শিট ব্যবহার করতে হবে যাতে ঢালাইয়ের সময় কংক্রিট বাইরে বের না হয়ে যায়।
ঢালাইয়ের আগে সব রেইনফোর্সমেন্ট ড্রয়িং অনুযায়ী আছে কিনা তা একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা চেক করিয়ে নিতে হবে।