Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

কংক্রিটে বাড়ি তৈরি: নির্মাণকাজের বিভিন্ন ধাপ

বর্তমানে নির্মাণশিল্পের বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান হলো কংক্রিট। কেবলমাত্র সহজলভ্যতার জন্য নয়, বরং সহজ ব্যবহার এবং যেকোনো নকশাকে দৃষ্টিনন্দন করতে ও বাস্তব রূপ দিতে আজকের সময়ে আমরা অনেক বেশি কংক্রিট ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছি। নির্মাণশিল্পে একটি ভবনের নির্মাণের সাথে কখনোই আরেকটি ভবনের নির্মাণ পদ্ধতির মিল পাওয়া সম্ভব নয়। কাঁচামাল একই হওয়া সত্ত্বেও মাটির প্রকৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, জমির আকার-আকৃতি এবং নকশার ভিন্নতার উপর নির্ভর করে নির্মাণ পদ্ধতি।

কংক্রিটে বাড়ি বানাতে গেলে নির্মাণ-সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত থাকে-

1. কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ
2. কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ


ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ-কাল-সময় ভেদে এই দুই সময়কালীন কাজে শ্রমিকের সহজলভ্যতা, কাঁচামালের প্রাপ্যতা এবং দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ


সাধারণত এই ভাগে নির্মাণের পূর্বের সকল কাজ অন্তর্ভুক্ত। যেমন-

  • ভবন নির্মাণের প্রথমেই কোথায় নির্মাণকাজ হবে সেটি অর্থাৎ ভবনের লোকেশন ঠিক করে নিতে হবে। অনেক সময় জায়গার স্বল্পতার কারণে কিংবা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য নির্মাণের জায়গা নির্বাচনে অধিক সচেতন হতে হয়।
  • এরপর ক্লায়েন্টের চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী একটি কার্যকর নকশা করা হয়।
  • নকশাকে বাস্তবায়ন করতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সাহায্য নিয়ে ফাউন্ডেশন, স্ট্রাকচার এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  • নকশা নির্বাচনের পর কাঁচামালের হিসেব, শ্রমিকের মজুরি এবং যাবতীয় খরচসহ একটি খসড়া বাজেট তৈরি করা হয় যা পরবর্তীতে নির্মাণকাজ চলাকালীন পরিবর্তিত হতে পারে।
  • সয়েল টেস্ট কিংবা মাটির পরীক্ষা একটি নিরাপদ ভবন নির্মাণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভবনের লোকেশন নির্ধারণের সাথে সাথে এই পরীক্ষা শুরু হয় এবং ভূ-বিশারদেরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ওই এলাকার মাটির উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকেন যেখানে মাটির প্রকৃতি, দূষণের প্রকৃতি-পরিমাণ এবং ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করা হয়।
  • সবশেষে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার অধীনে শুরু হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ভবনের কাজ।

এবং এর মাধ্যমে ভবন নির্মাণের প্রথম ধাপ অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজের সমাপ্তি ঘটে এবং শুরু হয় কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ।

কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ
এই কাজের পরিধি ভবন নির্মাণের শেষ কাজ পর্যন্ত। নথিপত্র সংক্রান্ত কাজের চেয়ে এসময় সাইট এবং ব্যবহারিক কাজকর্ম বেশি হয়ে থাকে বিধায় অধিক সচেতনতা আবশ্যক। যেমন-
  • কাজ শুরু হয় সাইটের প্রস্তুতির মাধ্যমে। যেকোনো নির্মাণ কাজের শুরুতে সাইট নির্মাণের অনুকূলে থাকে না। তাই এসময় সাইট থেকে আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় গাছপালা এবং আগাছা অপসারণ, মাটি আলগা করা, পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢালু করা এসব কাজ করা হয়ে থাকে।
  • সাইট পরিষ্কারের পর ভবনের নকশা অনুযায়ী সুতা, চক এসবের মাধ্যমে লে-আউট সাইটে স্থাপন করা হয়। লে-আউট স্থাপনের পর সাইটে প্রবেশের জায়গা, চারিদিকে রাস্তার অবস্থান, শ্রমিকদের বসবাসের সুযোগ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য অফিসের অবস্থান ঠিক করা হয়।
  • লে-আউট স্থাপনের পর মাটি খননের কাজ শুরু হয়। মাটির প্রকৃতি এবং গুণাগুণের ভিত্তিতে এই খনন কাজ পরিচালিত হয় এবং সাধারণত এই সময় সাইটে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার আধিক্য দেখা দেয়। তাই খননের সময়ে যথাসম্ভব সাবধান হতে হয় এবং নির্দিষ্ট গভীরতায় পৌঁছানোর পর রোলারের সাহায্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • পরবর্তী ধাপ হলো ফাউন্ডেশন নির্মাণ। ভবনের নকশা এবং ফাংশন অনুযায়ী কোন ফাউন্ডেশন ভবনের জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু ফাউন্ডেশন পুরো ভবনের ভার বহন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, সেক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের কাঁচামাল নির্ধারণ এবং নির্মাণের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা হয়।
  • ফাউন্ডেশন নির্মাণের পরপরই প্লিন্থ লেভেলে বীম তৈরি করা হয় পরবর্তী লেভেলের নির্মাণাকাজ পরিচালনার জন্য। এরপর যথাক্রমে কলাম, বীম, স্ল্যাব এবং দেয়াল তৈরি করা হয়। কলাম নির্মাণের ক্ষেত্রে উলম্ব বিচ্যুতি যাতে না হয় সেজন্য অভ্যন্তরীন রডগুলো কিছুতা বাড়তি রাখা হয়।
  • সিভিল, প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রনিক সংক্রান্ত সকল কাজ এবং স্থাপনা শেষে ছাদ নির্মাণের মাধ্যমে কাজ শেষ করা হয়। ছাদের ক্ষেত্রে সাধারণত পানির লিকেজ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পানিরোধক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
বীম-কলাম-স্ল্যাব সবকিছু নির্মাণের মাধ্যমে কখনো একটি ভবন বসবাস কিংবা কাজের উপযোগী হয় না যতক্ষণ না তার মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা প্লাম্বিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া আবশ্যক।
ওপরে বর্ণিত সকল বিষয় কংক্রিট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিধিমালা হিসেবে পরিচিত হলেও দেশ-কাল-অঞ্চলভেদে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। একদম নতুন পরিবেশে কিংবা প্রথমবার কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বভাবতই অধিক সাবধানতা অনুসরণ করা হয়। সেসব কিছুসহ ভবন নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা বলুন দক্ষ প্রকৌশলী ও স্থপতির সাথে, আর হোম বিল্ডার্স ক্লাব তো আছেই আপনার পাশে!