বসতবাড়ি নকশার ক্ষেত্রে যে স্পেসগুলো সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো শৌচাগার। গুরুত্বের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি হলেও এর নকশার পেছনে সময় ব্যয় করতে আমরা নারাজ। কিন্তু নকশা করতে গেলেও যে খুব সহজে এর নিষ্পত্তি সম্ভব তা নয়। বরং এই জায়গাকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী করে তোলার পেছনে সর্বাধিক নিয়মাবলী এবং নির্মাণ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়।
আমাদের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের অন্য কোনো জায়গায় একই সাথে পানি, বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমন্বয় শৌচাগার ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া বিরল। আন্তর্জাতিকভাবে এই শৌচাগার নির্মাণের কিছু বিধিমালা রয়েছে, যা আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুসরণ করা হয়। শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথমেই কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করা হয়। সেগুলো নিয়েই এখানে আলাপ করা হলো।
কারা ব্যবহার করবে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, এই শৌচাগার বাড়ির কতজন ব্যবহার করছে এবং তাদের বয়সসীমা। সাধারণত বয়স এবং ব্যবহারের তারতম্য অনুযায়ী শৌচাগারের লে-আউট পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
কীভাবে ব্যবহার করবে
শৌচাগারে কী কী ব্যবহার্য সামগ্রী রাখা হবে এবং কীভাবে তাদের রাখলে আলো-বাতাস চলাচল এবং যাতায়াতে কোনোরকমের বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি হবে না, এই বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সুতরাং শৌচাগারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস স্টোর থেকে শুরু করে বেসিন, ওয়াটার ক্লজেট ইত্যাদি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসবের ব্যবহারের প্রকৃতি জেনে নিতে হবে।
সচরাচর আমরা যে ধরনের শৌচাগার দেখি, তাতে দুটি আলাদা অংশ বা জোন বিদ্যমান। ড্রাই জোন এবং ওয়েট জোন। যে অংশটিতে পানির ব্যবহার সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ভেজা অংশ (ওয়েট জোন) এবং যে অংশে স্টোরেজ, ভ্যানিটি বা বাইরের লোকজনের জন্য ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাকে শুকনো অংশ (ড্রাই জোন) বলে।
ভেজা ও শুকনো অংশ আলাদা রাখার প্রয়োজনীয়তা
এই দুই অংশের ব্যবহার এবং কার্যকরী দিক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকায় এদের আলাদা রাখা প্রয়োজন। কেবল একটি অংশে পানির ব্যবহার সীমিত রাখলে তা পুরো শৌচাগারকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করবে।
আলাদা করার জন্য অনেক সময় দেয়ালের ব্যবহার লক্ষ্যণীয় হলেও দৃষ্টিনন্দন করতে হলে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে এদের আলাদা করা যেতে পারে। কেননা পুরো রুমের উচ্চতা ধরে দেয়াল তুলে দেয়ার ফলে এই দুই অংশকে কিছুটা কোণঠাসা করা হয়ে যায়, যা বাহ্যিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। ছোট শৌচাগারের ক্ষেত্রে এজন্য অনেক সময় ফ্রেমবিহীন গ্লাসের মাধ্যমেও করা যেতে পারে, যা শৌচাগারের আলো-বাতাস চলাচলেও কোনোরূপ বিরূপ প্রভাব ফেলে না।
ভেজা ও শুকনো অংশের ভেন্টিলেশন প্রসঙ্গ
এই দুই বিশেষায়িত জায়গার ভেন্টিলেশন কিংবা আলো-বাতাস চলাচল বাসার অন্যান্য রুমের মতোই গুরুত্ব বহন করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিই। কারণ এক্ষেত্রে যথাযথভাবে আলো-বাতাস পরিচালিত না হলে শৌচাগারে গুমোট এবং ড্যাম্প পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যা বাসার পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। এই কারণে অনেকে এক্সট্রাকশন ফ্যানের মাধ্যমে বাতাস বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এতে ভ্যানিটির আয়না ও অস্বচ্ছতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
শৌচাগারের লাইটিংও তেমনি একটি গুরুত্ববহ বিষয়, কারণ ছোট পরিসরে লাইটিংয়ের তীব্রতার দরুণ অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, এক্ষেত্রে সিলিংয়ে কিংবা ভ্যানিটির পাশে স্পট লাইট ব্যবহার করা হয়।
শৌচাগার লে-আউটের ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ বিষয়াদি
সর্বনিম্ন জায়গা ব্যবহারের মাধ্যমে শৌচাগারের লে-আউট কীভাবে করা যায় কিংবা কীভাবে সার্ভিসগুলো বসালে যেকোনোরকম সমস্যা এড়িয়ে চলা যায় তার জন্য কিছু মৌলিক নিয়ম আমরা অনেক আগে থেকে অনুসণ করে আসছি। যেমন-
● ভেজা অংশ বা ড্রাই জোনকে রুমের সবচেয়ে শেষ প্রান্তে রেখে লে-আউট করা, যাতে রুমের অন্যান্য অংশের সাথে পানির যোগাযোগ কম হয়। শাওয়ার, তোয়ালে, পানির ট্যাপ এসবের অবস্থানও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, ঠিক উপরে ট্যাপ থাকায় পানির বিস্তার বেশি এবং সরাসরি ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে কিছুটা তির্যকভাবে দেয়ালের সাথে বসানো যায়।
● শুকনা এবং ভেজা অংশের মাঝে সিটিং কিছুটা বাফার হিসেবে কাজ করতে পারে।
● রুম হিটারের ক্ষেত্রে তোয়ালে রেইল কিংবা ওয়াল হিটার বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে শৌচাগারের স্যাঁতস্যাঁতে ভাবও দূর হয়।
● ওয়াটার ক্লজেট, টাব কিংবা বেসিন সবকিছুর সামনে কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি জায়গা ক্লিয়ারেন্স হিসেবে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
● টয়লেটের সাথে নিকটবর্তী দেয়ালের কিংবা যেকোনো সার্ভিসের মাঝে দুরত্ব কমপক্ষে ১৫ ইঞ্চি হলে ভাল।
● শাওয়ারের জন্য কমপক্ষে ৩৬”x৩৬” জায়গা দেওয়া ভাল এবং দরজা বাইরে খোলার ব্যবস্থা রাখা।
● শৌচাগারের দরজা এবং ভেতরে পার্টিশনের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এসব মৌলিক এবং খুঁটিনাটি বিষয়ের সাথে সাথে পরিবারের লোকসংখ্যা, তাদের রুচি-পছন্দ এবং সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে লে-আউট স্থাপন করা হয়। কিন্তু সবক্ষেত্রেই চেষ্টা করা হয় যাতে কার্যকারিতার সাথে সাথে সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও সর্বাধিক প্রাইভেসি নিশ্চিত হতে পারে।