Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

ভূমিকম্প থেকে বাড়ির সুরক্ষা: কী কী করতে হবে?

২০২০ সালকে বলা হচ্ছে দুর্যোগের বছর। করোনার প্রকোপের খবরে যখন চারিদিক সরগরম, তখন আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বিগত কয়েক বছর ধরেই উপমহাদেশে ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় ক্রমাগতভাবে অনুভূত হতে থাকা ভূমিকম্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। এছাড়া ২০১৮ সালে নেপালে অনুভূত তীব্র ভূমিকম্প আভাস দেয় যে, যেকোনো সময় ঢাকাও হয়ে উঠতে পারে প্রলয়ঙ্করী এই দুর্যোগের কেন্দ্রস্থল।

অনেক সময়ই আমাদের আড্ডা-আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে একটি প্রশ্ন, ঢাকায় যদি আসলেই  বেশি মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, আমাদের কত শতাংশ ভবন সেখানে রক্ষা পাবে? খুবই শঙ্কাজনক প্রশ্ন হলেও এর সঠিক উত্তর দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। আগে নির্মিত হয়ে যাওয়া ভবনগুলোর সিংহভাগেরই এ ব্যাপারে যথেষ্ট পুনঃ-পরীক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এর সাথে সাথে নতুন নির্মিতব্য ভবনগুলোকে হতে হবে অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও ভূমিকম্প সহনীয়। একটি ভবনকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে তিনটি আলাদা পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

১. নকশা প্রণয়ন
 
বাংলাদেশে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন, স্থপতির ভূমিকা শুধু লেআউট বা প্ল্যান করে দেওয়া। এই ধারণাকে সামনে রেখে অনেকেরই ডিপ্লোমা বা স্থাপত্যের ছাত্রদের কাছ থেকে কোনোরকমে একটি প্ল্যান এঁকে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। একজন স্থপতিকে ভবনের নকশা প্রণয়ন করতে অবশ্যই ডিগ্রি (ডিপ্লোমা নয়) এবং লাইসেন্সধারী হতে হবে। থাকতে হবে পর্যাপ্ত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এবং হতে হবে Institute of Architects Bangladesh (IAB) এর সক্রিয় সদস্য। তিনি ভবনের নকশা প্রণয়নের সময় নিশ্চিত করবেন-

●    ভবনের জন্য দরকারি কলাম-বীম-শিয়ার ওয়াল বা সব ধরনের স্ট্রাকচারাল উপাদানের জন্য প্রাথমিক নকশা থেকেই যেন অবস্থান নির্ধারণ করা থাকে। প্রয়োজনে সেগুলোর আকার বাড়ানোর জন্যও যেন যথেষ্ট জায়গা থাকে।
●    ভবনের বাসিন্দার সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ লিফট ও সিঁড়ির ব্যবস্থা যাতে থাকে এবং উলম্ব চলাচল বা Vertical Connection যেন কোনোভাবেই অতিরিক্ত লিফট-নির্ভর না হয়।
●    দুর্যোগের সময় ভবন থেকে সবাই বের হয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য সরকারি বিধিমালা মোতাবেক আলাদা সিঁড়ি (Emergency Stairs) যেন অবশ্যই থাকে। ভবনের আকার অনুসারে এই আলাদা সিঁড়ি যেন প্রতি ১৫০ ফুট অতিক্রম করার মধ্যে কমপক্ষে দুইবার পাওয়া যায়।
●    ভবনের সামনে বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে যেন জায়গা ফাঁকা রাখা হয় এবং ভবনের মাঝে মাঝেও যাতে জরুরি প্রয়োজনে জমায়েত হবার ও সুরক্ষা পাবার উপকরণ পাওয়া যায়।

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে, ভবন সংক্রান্ত পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে স্থপতির কাজ। এই কাজে অন্য কোনো পেশার মানুষ নিয়োগ কখনোই একটি পরিকল্পিত ভবন তৈরি করতে পারে না, যে পরিকল্পনা দুর্যোগ মোকাবেলায় খুবই দরকারি।

২. কাঠামোগত নকশা

কাঠামোগত নকশা বা Structural Design হলো ভবনের নকশা ও আর্কিটেকচারাল ডিজাইন শেষ হবার পরবর্তী ধাপ। এই ধাপে কাজ করবেন একজন প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সধারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তাকে হতে হবে ডিগ্রিধারী, Institute of Engineers Bangladesh (IEB) এর সদস্য এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাঠামোগত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এই ধাপে তিনি যা যা করবেন তা হলো-
●    সয়েল টেস্ট করে ভবনের ফাউন্ডেশনের প্রকৃতি নির্ধারণ করবেন যেন দুর্যোগের সময় ভবন সঠিকভাবে এর ভার মাটিতে বহন করে নিতে পারে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে ভবন যেন কোনোভাবেই হেলে না যায়।
●    অত্যন্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে ভবনে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদান (রড, সিমেন্ট, স্টিল ও কাঠামো ধরে রাখতে যা যা কাজ করবে) সেগুলোর বিস্তারিত হিসাব ও ড্রয়িং করবেন এবং নিশ্চিত করবেন ভবনের সর্বোপরি কাঠামো যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সহনীয় হয়। ভবনের ডিজাইন করার সময় তিনি এই বিষয়টি চিন্তা করে ও সেফটি ফ্যাক্টর হাতে রেখে কাঠামোর ডিজাইন করবেন।
●    ভূমিকম্প সহনীয় ডিজাইন নিশ্চিত করতে কম্পিউটার সিমুলেশন তৈরি করে প্রকৌশলী আপনাকে আগেই নিশ্চিত করবেন ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ভবনের ব্যবহার কেমন হবে। এর সাহায্যেই ভবন তৈরির আগেই ভূমিকম্পের সময় ভবনের সহ্যক্ষমতা সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকবে।

৩. অনুমোদন ও নির্মাণ

অনুমোদন ও নির্মাণের ভার আপনার ও আপনার কনট্রাকটরের ওপর। এই ধাপগুলোতে যা যা মনে রাখবেন তা হলো-

●    প্রকৌশলী এবং স্থপতির নকশার আইনগত দায়ভার তাদের। কিন্তু সেই নকশা অপরিবর্তিত রেখে ও সকল বিধি মেনে পাশ করাবার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। কোনো ধরনের অবৈধ পরিবর্তন করে স্কয়ার ফিট বাড়ানো বা ফাঁকা জায়গা কমানোর ধারনা পরিহার করতে হবে। আপনার নিরাপত্তার জন্যেই এগুলো প্রয়োজনীয়।
●    পাশ করা নকশা যেন কনট্রাকটর হুবহু মেনে চলেন সে ব্যাপারে আপনাকে হতে হবে সচেতন। নকশার পরই আপনাকে স্থপতি তার কাজের অংশ হিসাবে Bill of Quantities (BoQ) দেবেন। প্রকৌশলীর ডিজাইন শেষ হয়ে গেলে পাবেন Specification (স্থপতির অফিস থেকেই)। এই দুটি আপনাকে সকল উপাদানের দাম ও উপকরণের খুঁটিনাটি সম্পর্কে একদম পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেবে। এগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।

অপেশাদার কারও পরামর্শে বাড়ি সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মনে রাখবেন, একজনের ১০টি বাড়ি থাকলেও তার পরামর্শ আপনার বাড়িটিকে ভূমিকম্পরোধী করার নিশ্চয়তা দেয় না। বরং আপনার নিজের বিনিয়োগ ও পরিবারের নিরাপত্তা নির্ভর করে আপনার সিদ্ধান্তের উপরেই। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে পেশাদারী সাহায্য ও কাজের গুনগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই কেবল ভূমিকম্প সহনীয় বাড়ি তৈরি করা সম্ভব।