Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

উঁচু ভবন নির্মাণের সময় সতর্কতা

আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগের অরণ্যশোভিত ঢাকা আজ ছেয়ে গেছে সুউচ্চ অট্টালিকায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে ছুটে আসা মানুষ এবং ক্রমবর্ধমান ব্যবসা-বাণিজ্যের চাপে ঢাকায় প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে উঁচু দালানের সারি। প্রায় সারাবছর ধরে শহরে চলতে থাকে নির্মাণকাজ। কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে এসব উঁচু ভবনের নির্মাণকাজ না করলে ঘটে যেতে পারে ভয়ানক বিপদ। চলুন জেনে নেওয়া যাক এক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

বিল্ডিং কোড মেনে চলা

উঁচু দালান নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) এর সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। এক্ষেত্রে FAR-এর হিসেব মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ৯৬ এর ১২ নং উপধারা ১ অনুযায়ী ৮ তলা বিল্ডিংয়ের সামনে ২৫ ফুট এবং ৬ তলা বিল্ডিংয়ের সামনে ১৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকা প্রয়োজন। এতে ৮ নং বিধির ৫ উপবিধিতে আরও বলা হয়েছে, নিকটবর্তী সড়কের কেন্দ্র থেকে ৪.৫ মিটার এবং সড়কের ইটের সীমানা থেকে ১.৫ মিটার দূরে দালান নির্মাণ করতে হবে।

এছাড়া বিল্ডিং সাপেক্ষে গ্যাস, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি বিভাগের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়াও বহুতল ভবনে পরিপূর্ণ অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা, যেমন- দ্রুত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা, স্মোক ডিটেক্টর, কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ব্যবস্থা, ফায়ার ডিটেক্টর ইত্যাদি থাকা আবশ্যক। এজন্য সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ দুর্যোগ এড়ানোর স্বার্থে বিল্ডিং কোডের যথাযথ প্রয়োগ এবং কোডের সম্যক ধারণাসম্পন্ন সাইট প্রকৌশলী নিয়োগ।

যথাযথ সয়েল টেস্ট

উঁচু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাটির বেয়ারিং ক্যাপাসিটি বা ভারবহন ক্ষমতা এবং মাটির প্রকৃতি নির্ধারণ প্রয়োজন। মাটির ভার-ধারণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে প্রকৌশলী ভবনটির ফাউন্ডেশন এবং কত তলা হবে তা নির্ধারণ করেন। মাটির উপরের স্তর শক্ত হলেও নিচের স্তর শক্ত না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে যথাযথ কোড মেনে উপযুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবস্থা ডিজাইন করতে হবে।

এছাড়াও নির্মাণকাজের সময় সাইটে যেসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তার মধ্যে আছে-

বৃষ্টির সময়ে করণীয়

নির্মাণকাজের সময় বৃষ্টি হলে পানি ও সিমেন্টের অনুপাত ঠিক না রাখার কারণে কংক্রিটের গুণগত মান বিনষ্ট হয় এবং স্থায়ীত্ব কমে যায়। এতে সারফেসে ক্র্যাক, ডাস্টিং ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। হঠাৎ বৃষ্টি দেখা দিলে সাময়িকভাবে ঢালাই কাজ বন্ধ রাখা উচিৎ। বেসমেন্টের কাজের সময় ত্রিপল দিয়ে ঢাকা, সিমেন্টের ব্যাগ দেয়াল থেকে কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি দূরে রাখা এবং প্লাস্টারের কাজের সময় বৃষ্টি হলে তা পলিথিন দিয়ে সঠিকভাবে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করা জরুরি।

নির্মাণকাজের পরিচ্ছন্নতা এবং বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ

নির্মাণকাজের সময় উদ্ভূত বর্জ্য যেন শ্রমিকদের ও সর্বোপরি আশেপাশের জনজীবনের দুর্ভোগের কারণ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে চলমান মহামারি কোভিড-১৯ এর জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যেমন- নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করা এবং শ্রমিকদের জন্য পরিচ্ছন্ন বাথরুম এবং পরিচ্ছন্নতার সকল উপাদানের সরবারাহ নিশ্চিত করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া।

নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ   

শ্রমিকদের যথাযথ সেফটি পোশাক, যেমন- মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, গামবুট, সেফটি হেলমেট ইত্যাদি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বৃষ্টির সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে ইলেকট্রিক লাইন চেক করে নিতে হবে। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শ্রমিকদের নির্মাণ কাজের সেফটি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা দরকার। অসচতেনতার কারণে নির্মাণকাজে শ্রমিকদের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনার হার ঊর্ধ্বমুখী। শুধু শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই নয়, নির্মাণকাজে নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার না করার কারণে পথচারীরাও হতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার।

বিগত দশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে অনেকটাই। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিতকরণের জন্য জন্য সামনের দিনগুলোতেও সুউচ্চ ভবন নির্মাণের কাজ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তাই এক্ষেত্রে নির্মাণের আগে ও পরে সম্ভাব্য সকল ঝুঁকি এড়াতে নির্মাণ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া আবশ্যক।